দারিদ্র্য আটকাতে পারেনি অটোরিকশাচালক বাবার বড় মেয়ে উম্মে হাফসাকে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। অভাব-অনটনের সংসারে উম্মে হাফসার এমন সাফল্যে সবাই খুশি হলেও তাঁর ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবার।
উম্মে হাফসা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বালুঘাটা গ্রামের অটোরিকশাচালক মো. হাবিবুল্লাহ ও মোরশেদা বেগমের মেয়ে। চার বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় উম্মে হাফসা। তিনি উপজেলার নাকশী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি ও শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।বিজ্ঞাপন
হাফসার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই শতক জমির ওপর একটি টিনের ঘর আছে তাদের। তার পাশে একটি একচালা রান্নাঘর। এই জমির মালিকানা বাবার কাছ থেকে এখনো পাননি হাবিবুল্লাহ। এ ছাড়া হাবিবুল্লাহর বাবার দেওয়া চার শতক আবাদি জমি আছে। এই জমিতে তিনি চাষাবাদ করে থাকেন। একটি ঘরে পার্টিশন দিয়ে গাদাগাদি করে পাঁচ ভাইবোন থাকে। অন্য পাশে স্বামী-স্ত্রী থাকেন। ঘরে প্রয়োজনীয় আসবাব না থাকায় চৌকিতে বসে বা বিছানায় বসে পাঁচ ভাইবোনের লেখাপড়া করতে হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হাবিবুল্লাহ। তিনি তাঁর একার আয়ে আর মানুষের সহায়তায় খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন।
উম্মে হাফসা বলেন, তাঁর বাবা অটোরিকশা চালিয়ে সাত সদস্যের সংসার চালান। মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড়ের সামর্থ্য নেই। তিনি জেনেছেন, ভর্তি হতে ৩০ হাজার টাকার মতো লাগবে। নিজের স্বপ্ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একজন মানবিক চিকিৎসক হতে চাই। গরিব মানুষের সেবা করতে চাই।’
হাবিবুল্লাহ বলেন, তাঁর মেজ মেয়ে মাসকুরা এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছোট মেয়ে হুসনা আক্তার দশম শ্রেণিতে, মারিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে আবু রুহা দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। মানুষের সহযোগিতা নিয়ে তিনি মেয়েদের পড়াচ্ছেন। অটোরিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। এই টাকায় সংসারে দুই বেলা ভাতের জোগাড় হলেও পাঁচ সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালাতে তাঁকে হিমশিম খেতে হয়। মেয়ের ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। বললেন, ‘মেয়েডা স্বপ্ন দেহে ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু অহন ভর্তি করাইতে মেলা টেহা দরকার। হাতে তো কোনো টেহাপয়সা নাই। অহন কেমনে কী করমু, কোনো কিছু বুঝবার পাইতাছি না।’