ঢাকাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল লাইন-৬ এর ভাড়া হতে পারে সর্বনিম্ন ৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সা হিসাবে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি এমন সুপারিশ করেছে। তবে ভাড়া চূড়ান্ত করতে আরও যাচাই-বাছাই করা হবে। এ সংক্রান্ত কমিটি গত ১৬ মার্চ পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বিআরটিএ, বিআরটিসি, ডিটিসিএ, ডিএমটিসিএল, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক বিভাগের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে।
কমিটির প্রস্তাবিত ভাড়া অনুসারে দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সর্বোচ্চ ভাড়া দিতে হবে ৪৮ টাকা। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া ২৮ টাকা। আগারগাঁও থেকে কাওরান বাজারের ভাড়া সর্বোচ্চ ৮ টাকা। কাওরান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ১২ টাকা। তবে এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় কমবেশি যে কোনটাই হতে পারে।
ভাড়ার হার প্রস্তাবনার ক্ষেত্রে মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারী খাত ও বৈদেশিক ঋণের মাসিক ও দৈনিক খরচ, মেট্রোরেল পরিচালন ব্যয়, কর্মীদের বেতন, বিদ্যুত বিলসহ বিভিন্ন খাত পর্যালোচনা করেছে কমিটি। সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের হিসাবও নিরীক্ষা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেলে স্টেশন আছে ১৬টি। কোথাও কোথাও এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনের দূরত্ব ১ কিলোমিটারেরও কম। ফার্মগেট থেকে কাওরান বাজার স্টেশনের দূরত্ব পৌনে ১ কিলোমিটারের মতো। এত স্বল্প দূরত্বে কিলোমিটার হিসাবে নয়, বরং পৃথক সর্বনিম্ন ভাড়া থাকা উচিত বলেও মনে করে এ সংক্রান্ত কমিটি। সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকাও নির্ধারণ হতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে এই কমিটিতে আরও অভিজ্ঞদের স্থান দেয়া উচিত বলে মনে করেন এই কমিটির অনেকেই। এর আগে এই কমিটি মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের যে সুপারিশ করেছিল তা এখনও আমলে নেয়নি সরকার। এ জন্য পুনর্গঠিত কমিটি আরও বৈঠক করে পুনরায় ভাড়া সুপারিশ করবে। তারপর যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে মেট্রোরেলের ভাড়া।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের জুনে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের একাংশ জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। ২০৩০ সালের মাধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে অসহনীয় যানজট থেকেও মুক্ত হবে নগরবাসী। তাই মেট্রোরেলের প্রতি রয়েছে ঢাকাবাসীর আলাদা এক আকর্ষণ।
অর্ধেক কোচ ঢাকায় ॥ জাপান থেকে মেট্রোরেলের আরও একটি সেট কোচ রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকার ডিপোতে রাখা হয়েছে। এর ফলে ২৪ সেটের মধ্যে ১২ সেট কোচ ঢাকা পৌঁছেছে।
ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানায়, এভাবে পর্যায়ক্রমে চলতি বছরে জাপান থেকে ঢাকায় পৌঁছানো কোচের সংখ্যা হবে ২১ সেট। বাকি তিন সেট কোচ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে পৌঁছাবে।
কোচগুলো মেট্রোরেলের মেইন লাইনে পরিচালনা করার আগে মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল, ওয়াশিংসহ প্রতিটি কোচের ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ১৯ ধরনের নানা পরীক্ষায় সময় লাগে দেড় মাস। এ জন্য ইতালি থেকে এক ধরনের যন্ত্র আনা হয়েছে।
মেট্রোরেলের প্রজেক্ট ম্যানেজার এবিএম আরিফুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে ১২ সেট কোচ ঢাকায় চলে এসেছে। পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেল কোচ ঢাকায় আসছে। চলতি বছরে ঢাকায় কোচের সংখ্যা দাঁড়াবে ২১ সেট। বাকি তিন সেট ২০২৩ সালের শুরুতেই আসবে।
২৪ সেট ট্রেনের জন্য ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। স্টেনলেস স্টীল বডির ট্রেনগুলোয় থাকবে লম্বালম্বি সিট। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুই পাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানী স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা হবে ১ হাজার ৭৩৮ জন। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্ট কার্ড টিকেটিং ব্যবস্থা। মেট্রোরেলে ২৪টি ট্রেন প্রতিঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে ৬০ হাজার যাত্রী আনা-নেয়া করতে সক্ষম হবে।