রং কেবল রং নয়; স্থাপত্যে রং ‘একের ভেতর অনেক’ ভূমিকা পালন করে। এই যেমন স্থাপত্যটাকে টেকসই করে। ঝড়, বৃষ্টি, রোদ, ধুলার ঝাপটা থেকে বাঁচায়। আবার একটা নির্দিষ্ট আবহ সৃষ্টি করে ওই স্থাপত্য নির্মাণের উদ্দেশ্যসাধনে সহায়তা করে। এই যেমন হলুদ রং ক্ষুধা উদ্রেককারী। তাই এখন অনেক হোটেল আর রেস্তোরাঁর ভেতরের দেয়াল রাঙানো হচ্ছে হলুদের ছোঁয়ায়। দেখে নেওয়া যাক স্থাপত্যের রং কীভাবে প্রভাব ফেলে।

‘হাউ কালার ইফেকটস আর্কিটেকচার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আর্ক ডেইলি
ডটকম। সেখানে স্থাপত্যে বিভিন্ন রঙের প্রভাব নিয়ে স্থপতি ও মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। এই যেমন নীল রং মানুষকে ‘সজাগ’ রাখে, জেগে থাকতে সাহায্য করে। আবার কেউ যদি মন–খারাপ ভাবটা উদ্যাপন করতে চান, তাহলে নীলচে রঙের একটা ঘরে গিয়ে এক কোনায় চুপচাপ বসে থাকতে পারেন।
মানুষের একেকটি অনুভূতির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে একেক রঙের। যেমন লাল রং ভয় বা বিপদের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেটি মানুষের রক্তের রং লাল হওয়ায় কারণেও হতে পারে। লাল আসক্তি, উত্তেজনা, উষ্ণতা, ভয়, রাগ—এ রকম নানা কিছুকে নির্দেশ করে।

ছবি: সংগৃহীত
এটা নির্ভর করে আপনি কোথায় লালের কোন শেড ব্যবহার করছেন। লালের গাঢ় শেডগুলো, যেমন মেরুন বা ওয়াইন রংগুলো প্রলুব্ধকর আবহ সৃষ্টি করে। আবার যদি একটু উজ্জ্বল বা নিয়ন লাল ব্যবহার করেন, সেটা বেশ বন্ধুভাবাপন্ন একটা আবহ সৃষ্টি করে।

ছবি: সংগৃহীত
তবে বিভিন্ন শেডের লাল রঙের ব্যবহারে আবার অনন্য একটা মুড সৃষ্টি করা যেতে পারে। কোনো নিরপেক্ষ রঙের মাঝে লাল দিয়ে কিছু আঁকা বা নকশা করা হলে সেটা আকর্ষণীয় হবে।

ছবি: সংগৃহীত
তবে ঘরের আকার ছোট হলে লাল ব্যবহার না করাই ভালো, তাতে স্পেসটা আরও ছোট মনে হবে। যেকোনো গাঢ় রঙে জায়গা ছোট দেখায়। কমলাও উজ্জ্বল রং, তবে লালের মতো চড়া নয়। আপনি উজ্জ্বল রঙের ‘ভক্ত’ হলে বসার ঘরটিকে কমলায় রাঙিয়ে তুলতে পারেন। তবে কাছাকাছি কয়েকটা শেড ব্যবহার করলে বেশি ভালো হবে।

ছবি: সংগৃহীত
হলুদ ‘হ্যাপি মুডে’র রং। এই রং দিয়েই আপনি ঘরের পুরোটাই রাঙিয়ে তুলতে পারেন। ‘শান্ত’ এই রঙের বৈশিষ্ট্যের কারণে বাচ্চার ঘর, ডে কেয়ার বা কিন্ডারগার্টেনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত
অনেকের মতে হলুদ ক্ষুধা উদ্রেককারী রং। তাই অনেক রেস্তোরাঁতেও এখন হলুদের ব্যবহার চলে। এদিকে সবুজ খুবই আরামদায়ক রং। বিশেষ করে নিয়ন সবুজ, কলাপাতা বা টিয়াসবুজ।

ছবি: সংগৃহীত
সাদার পাশে সবুজ আরও অর্থপূর্ণভাবে ফুটে ওঠে। তাই মৈত্রী (ফ্রেন্ডলি) আবহ তৈরিতে সবুজ আর সাদা পাশাপাশি রেখে রাঙাতে পারেন আপনার দেয়াল। পাবলিক স্পেস, যেমন ড্রয়িংরুমের জন্য অনেকেরই পছন্দের রং নীল।

ছবি: সংগৃহীত
কাছাকাছি অন্য রং বা নীলের একাধিক শেড অথবা সাদার সঙ্গে ব্যবহার করে বাড়ির বাইরের অংশেও ব্যবহার করা যেতে পারে নীল। ঘরের বাইরের দিকে আলোর রহস্যময় ব্যবহার করতে চাইলে বাইরের দেয়ালে নীলই সেরা।

ছবি: সংগৃহীত
রঙের ক্ষেত্রে নিজের বাসাকে অন্য সব বাসা থেকে যদি আলাদা করতে চান, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন বেগুনি। অন্যদিকে, মডার্ন স্থাপত্যে বাইরের দিকে যে রং সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়, সেটি হলো সাদা। সাদা পবিত্রতা আর শুভ্রতার রং।

ছবি: সংগৃহীত
স্থাপত্যের ডিজাইন যদি এমন হয় যে সেখানে আলো–ছায়ার খেলা আছে, তাহলে বাইরের দিকে সাদা রং ব্যবহার করাই সবচেয়ে উপযোগী হবে। অন্যদিকে, ভেতরের দেয়ালে সাদা ব্যবহার করলে সেই স্পেসটা বড় দেখায়, উজ্জ্বল দেখায়।

ছবি: সংগৃহীত
এ কারণেই সিলিংয়ে সাধারণত সাদা রং ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, আপনি যদি দেয়াল পেইন্টিং বা নানা কিছু দিয়ে সাজাতে চান, সে ক্ষেত্রেও সাদা হবে সেরা, যাতে অন্য সব রং তার সক্রিয়তা নিয়ে ফুটে উঠতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত